অভিযোগ আর শাস্তির বিপক্ষে যা বললেন সামিয়া রহমান


অভিযোগ আর শাস্তির বিপক্ষে যা বললেন সামিয়া রহমান

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি। গবেষণা প্রবন্ধ চুরি করার শাস্তি হিসেবে তার পদাবনতি দেয়া হয়।  
 
এ বিষয়ে নিয়ে এতদিন চুপ থাকলেও ৮ ফেব্রুয়ারী, সোমবার সকালে এ বিষয় নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন তিনি। পাঠকদের জন্যে হুবুহু তুলে ধরা হলো তার স্ট্যাটাসটি।   
 
বহুদিন ধরে আমি ও আমরা চুপ করেই ছিলাম। প্রায় চারটি বছর। আইনগত কিছু বাধ্যবাধকতা ছিল। অনেকে বারবার বলেছেন সামিয়া রহমান এতোদিনেও চুপ করে আছে কেন? নিশ্চয়ই সে দোষী । একবার ক্ষমতাধর ষড়যন্ত্রকারীদের খপ্পরে পড়ুনতো, আইনগত জটিলতায় পড়ুন, তারপর বুঝবেন কখন কথা বলা যায়, আর কখন নয়! এতো চরম অন্যায় হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোনো জবানবন্দি দেইনি তদন্তাধীন বিষয় বলে। কিন্ত এখন মনে হয় কিছু তথ্য জানানো দরকার অন্তত। আজ বরং না হয় আমার পিতার জবানবন্দিতে কিছু সত্য উন্মোচিত হোক।
 
অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় একমাসের তদন্তকে টেনে হিচড়ে প্রায় ৪ বছরে এনে রায় দিয়েছে। এমনকি এই সিন্ডিকেট ট্রাইব্যুনালের একটা সিদ্ধান্তও মানেনি। অথচ প্রথম আলো, বাংলা ট্রিবিউন, ডেইলি স্টার সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম আর তথাকথিত কিছু সুশীল, কুশীল, হতাশাবাদী নারীকর্মী ও উগ্রবাদীদের বক্তব্য- ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী নাকি এই রায়! পত্রিকায় কাজ করেন,লেখেন অথচ পত্রিকার লেখা পড়েন না! কি রকম সুশীল বা কুশীল আপনি ও আপনারা!
আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডীন ও ট্রাইব্যুনালের আহবায়ক ড. রহমত উল্লাহ নিজ জবানবন্দিতে বলেছেন এটা প্লেজারিজম নয়। ন্যায় বিচার হয়নি। সামিয়া কোথাও এটা জমা দিয়েছে তার প্রমান এমনকী ট্রাইব্যুনালও খুঁজে পায়নি। অথচ মারজান নিজে তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে স্বীকার করেছে সেই জমা দিয়েছে, সেই রিভিউয়ারের কপি সংশোধন করেছে। ডীন অফিসের কোথাও আমার সংশ্লিষ্টতার দালিলিক প্রমান তদন্ত কমিটি, ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত খুঁজে পায়নি। এই লেখার কোনো এডিটোরিয়াল কী বোর্ড ছিল না? রিভিউয়ার কী ছিলনা? তারা কি মিশেল ফুকো বা এডওয়ার্ড সাঈদের নাম শুনেননি? তবে ফুট নোট পর্যাপ্ত নয় বলে সংশোধনের কথা বললেন না কেন? লেখকের নিজস্ব পর্যালোচনার অভাবের কথা বললেন না কেন? তারা তো অর্থ সম্মানী নিয়ে কাজ করেন। ট্রাইব্যুনাল স্পস্টতভাবে এডিটোরিয়াল বোর্ডের শাস্তির কথা বলেছেন। তারা বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত বলে আজ তাদের শাস্তি দেবার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই?
 
যেহেুত লেখাটির আইডিয়া দিয়েছিলাম মারজানকে, (শুধু একটি নয় অজস্র) কিন্তু তার চূড়ান্ত কপি, রিভিউয়ারের কপি, রিভিউয়ারের মন্তব্য কোনো কিছুই মারজান নিজে এবং ডীন অফিস জানায়নি। মারজানতো জানায়ইনি। এর প্রমানও আমার কাছে। যথাসময়ে আদালতে পেশ করবো। ডীন অীফস নিজেও আমার সংশ্লিষ্টতার দালিলিক প্রমান পায়নি। তদন্ত কমিটি ও ট্রাইব্যুনালের রায়ে তার উল্লেখ আছে। অথচ ট্রাইব্যুনালের সময় প্রথম জানতে পারলাম, রিভিউয়ার নাকি অসঙ্গতি আছে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তবে এই মন্তব্য থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন ডীন মহোদয় ড. ফরিদ উদ্দীন কেন লেখাটি আমার সম্মতি ছাড়া ছাপালেন। এমনতো না যে তার সাথে আমার ব্যক্তিগত খাতির আছে। খাতির থাকলে তো তিনি যেচে পড়ে আমার এতো বড় ক্ষতি করতেন না।
 
তৎকালীন ভিসি ড. আরেফিন স্যার ২০১৭ ফেব্রুয়ারিতে যখন তৎকালীন ডীন ড. ফরিদ উদ্দীনকে বারবার বিষয়টি সিন্ডিকেটে তুলতে বলেছিলেন, ড. ফরিদ উদ্দীন কেন তুললেন না? কেন কালক্ষেপন করলেন ৭ মাস। আর আরেফিন স্যার বদলী হয়ে যাবার দুদিনের মাথায় আমায় ফোন দিয়ে বললেন এবার তিনি প্রতিশোধ নেবেন। মারজান তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, ড. আরেফিন স্যার নাকি তাকে ১০ মিনিটের মাথায় ডীন পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এটা হবে তার ন্যাচারাল জাস্টিস। আমি শুধু বারবার প্রশ্ন করেছিলাম আমি এখানে কোথায় জড়িত হচ্ছি। তার উত্তর ছিল আমি ড. আরেফিনের অনুসারী আর আমার বিভাগের দুজন সিনিয়র শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে তার কাছ থেকে তথ্য নিয়েই শিকাগো ইউনিভার্সিটির কাছে কমপ্লেইন করেছে, অথচ এটি ছিল অফলাইন জার্নাল। অদ্ভূত বিষয় হলো, সাংবাদিকতার বিভাগের এক মহিলা শিক্ষকের বিরুদ্ধে যখন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছিল, তিনি পড়াতে পারেন না বলে (যিনি বর্তমানে আমার পূর্বের গণমাধ্যমে কর্মরত আছেন এখন) কই তখন তো বিষয়টি ডিপার্টমেন্টে বহুদূর গড়ালেও কোনো নিউজ হয়নি। একই বিভাগের মহিলা সিনিয়র শিক্ষক যখন শামিম রেজার লেখা হুবুহু নকল করে বাইরের জার্নালে ছাপান, তখন কেন প্রথম আলো বা সুশীল কুশীলরা আন্দোলন বা নোংরামি করেন না? তিনি বা তারা আপনাদের লোক বলে?
 
যে বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে মারজান নিজে লিখিতভাবে স্বীকার করেছে সে জমা দিয়েছে, রিভিউয়ারের কপিও সে নিয়েছে এবং তারমতো সংশোধন করে জমা দিয়েছে, আর তদন্ত কমিটি ট্রাইব্যুনাল বলছে দালিলিকভাবে আমার সংশ্লিষ্টতার প্রমান তারা পায়নি, তবে আমার নামে এই মহোৎসব কেন? আমি আপনাদের কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিলাম রে ভাই ও তথাকথিত বোনরা? বিশ্বাস না হলে ট্রাইব্যুনালের আহবায়ক ড. রহমতউল্লাহ ও মেম্বার ড. জিনাত হুদার সাথে কথা বলে দেখুন, কোন শিক্ষক রাজনীতির নোংরা খেলার মধ্যে পড়েছি আমি!
 
আমি কেমন করে ক্লাসে যাবো বলে মন্তব্য করেন জনাব আলি ইমাম মজুমদার ? আমার ছাত্রছাত্রীরা আপনার মতো পদাধীকার বলে নয়, অন্তর দিয়ে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে বলেই প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিচ্ছে, পাশে দাঁড়াতে চাচ্ছে। বিভাগের অরিয়েন্টেশনে সব শিক্ষকের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা বলে সামিয়া রহমান ম্যাম এই বিভাগের বলেই এই বিভাগে ভর্তি হয়েছি। এতো জ্ঞানগর্ভ মতামত না দিয়ে অনুসন্ধান করুনতো একটু কষ্ট করে, আপনার নামে অন্যের লেখা আপনার সাক্ষর ছাড়া, এডিটোরিয়াল বোর্ডের অ্যাকসেপ্টেন্স ছাড়া, রিভিউয়ারের কপি আপনার কাছে সংশোধিত কপি প্রেরণ ছাড়া কেমন করে প্রকাশিত হয়। তৎকালীন এবং বর্তমান ডীন তো আমার বন্ধু নয়, বরং যেচে পরে শত্রু। তবে তারা কেন দালিলিক প্রমান পেলেন না আমার বিরুদ্ধে? আজকে আপনার নামে লেখা ছাপিয়ে দেই প্রথম আলোতে। প্রথম আলো কি কোনো এডিটোরিয়াল চেকিং এ যাবে না? সরাসরি আপনার নাম দেখেই ছেপে দেবে? হয়তো খাতিরের কারনে ছাপতে পারে কিন্তু আমার সাথে তো তৎকালীন ডীন মহোদয়ের খাতির ছিল না। আমি তো চামচামি নেইটওয়ার্কিং কোনোদিন করিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। কোনো বাবা, চাচা, শ্বশুর সূত্রে যোগদানে সহায়তা নেয়নি। সম্মান ও মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ দু-দুটি স্বর্ণপদক পেয়েছিলাম এবং নিজস্ব মেধার জোরে চাকরিও পেয়েছিলাম। দলীয়করণের রাজনীতি তখন এতোটা প্রবল ছিল না বলেই বোধহয় চাকরিটি হয়েছিল।
 
আমি নিজেই যেখানে ২০১৭ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি লেখাটি প্রথমবারের মতো দেখে প্রত্যাহারের আবেদন করি, ৭ মাস সেটিকে ধাপাচাপা দিয়ে ভিসি পরিবর্তনের সাথে সাথে কেন তোলা হলো সিন্ডিকেটে? কেন আমার লেখা প্রত্যাহারের চিঠিটিতে ড, ফরিদ উদ্দীনের সাক্ষরযুক্ত থাকা সত্ত্বেও গ্রহণ করলেন না তদন্ত কমিটি। কেন এডিটোরিয়াল বোর্ড বা রিভিউয়ারকে একবারও তদন্তে ঢাকা হল না? তদন্ত কমিটির বিজ্ঞ একজন সদস্য সর্বত্র সেই ২০১৭ সালে তদন্ত শুরুর শুরু থেকে মিডিয়াতে বারবার আমার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করেছেন। আমার চেহারা, পোশাক সবকিছুতেই তার আপত্তি। ২০১৯ সালে আমার বিভাগের শিক্ষক দিয়ে তিনি বারবার আমাকে চাকরি ছাড়ার হুমকি দেন এবং বলেন নইলে তিনি আমার ক্ষতি করবেন। তিনি তো সফল তাইনা? ক্ষমতার জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করা এই সমাজে আর কি প্রত্যাশা করা যায়?
 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. দানেশ মিয়ার একটি লেখা ফেসবুকে পড়লাম। তার তত্ত্বাবধানে মাষ্টার্সের এক ছাত্র গবেষণা করেছিল। দুইবছর পর তিনি জাপান থেকে পোষ্ট ডক শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূনরায় জয়েন করেন, তখন তার চোখে পড়ে তার সেই ছাত্র সেই গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে ভারতের কোন এক অখ্যাত জার্নালে একটি পেপার প্রকাশ করেছে। সেখানে তিনিও একজন অথর। সেই ছাত্র সেই পেপারের ব্যাপারে তার সাথে ঘুণাক্ষরেও কোন কথা বলেনি। পেপারটা জার্নালে পাঠানোর আগে ঠিক আছে কিনা, তাও শেয়ার করেনি। মোট কথা তার কোন অনুমতি না নিয়েই সে পেপারটা পাবলিশ করেছে। পেপারটা দেখে তার খুব খারাপ লেগেছিল এজন্য যে, এর লেখাগুলো মোটেও মানসম্মত ছিল না। একবার দেখে আর দ্বিতীয়বার তিনি পেপারটা আর কোনদিন খুলে দেখেননি। পেপারটাতে কোনো প্লেজারিজম আছে কিনা, তাও পরখ করে দেখেননি তিনি। তিনি কোনদিন এই ছাত্রকে এব্যাপারে কোন প্রশ্নও করেননি। তিনি মনে করেছেন, এই পাবলিকেশনটা হয়ত ঐ ছাত্রের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বা কোথাও পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। মো. দানেশ মিয়া নিজেই এখন প্রশ্ন করেছেন, সে পেপারে যদি বড় ধরনের কোন প্লেজারিজম থাকে, তাহলে সেটার জন্য কি তিনি দায়ী হবেন? তাকেও কি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে?
 
ট্রাইব্যুনালের আহবায়ক ড. রহমত উল্লাহ গণমাধ্যমেই বলেছেন, কত অংশ কপি করা ঠিক, কতো কপি করা ঠিক নয়- এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত কোনো নীতিমালা নেই। প্লেজারিজম নিয়ে কোনো নীতিমালা কোনো নীতিমালা নেই। যেখানে নীতিমালাই নেই সেখানে ট্রাইব্যুনালকে পাশ কাটিয়ে কিভাবে এই শাস্তি হয়? এতে ন্যায় বিচার হয়নি। যাকে অবনমন করেছেন তার রিভিউয়ার আছেন না? তার দায়িত্ব কোথায়? যিনি লিখেছেন তাকে শাস্তি দিতে চান , কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এসমস্ত পদ্ধতির সঙ্গে যারা ছিলেন তারা কতোটুকু দায়িত্ব পালন করেছেন? তাদের কেন শাস্তি হয় না?
 
২০১৭ সালে তর্কিত নিবন্ধটি প্রকাশিত হবার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেজারিজম সংক্রান্ত কোনো আইন, নীতিমালা, বিধি বা গাইড লাইন ছিলনা। একজন লেখক অন্য লেখকের রেফারেন্স কতটুকু দেবেন বা নেবেন বা কতটুকু শব্দসীমা অতিক্রমের মাপকাঠি তার কোনো বিধি বিধানই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এটি সম্পাদনা পরিষদের সম্পূর্ণ নিজস্ব বিশ্লেষণের বিষয়। তাই মারজানের রেফারেন্সের ঘাটতি বা শব্দসীমা অতিক্রমের বিষয়টি সম্পূর্ণ এডিটোরিয়াল বোর্ডের উপর বর্তায়।
 
যদিও তর্কিত নিবন্ধটি শুধুমাত্র ২০১৫ সালে সামিয়ার প্রেরিত আইডিয়া ও রেফারেন্সর উপর ভিত্তি করে মারজান লিখেছেন এবং জমা দিয়েছেন তথাপিও তর্কিত নিবন্ধের সংশ্লিষ্ট অংশ প্লেজারিজম এর সংজ্ঞাভূক্ত নয়। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রদত্ত সংজ্ঞায় সুস্পষ্টভাবে প্লেজারিজম বলেতে অন্যের কাজকে নিজের নামে উপস্থাপন করাকে বোঝায়। তর্কিত নিবন্ধে যথাযথভাবে প্রতি পাতায় ফুটনোটের উল্লেখ হয়নি কিন্তু প্রতি অধ্যায়ের শুরুতে মিশেল ফুকো ও এডওয়ার্ড সাঈদের বইয়ের নাম এবং প্রতি প্যারার শুরুতে মিশেল ফুকো ও এডওয়ার্ড সাঈদের নাম উল্লেখ আছে। তর্কিত নিবন্ধটির শেষে রেফান্সেও বিস্তারিত উল্লেখ আছে। মারজান তদন্ত কমিটির সামনে বারবার প্রতি পৃষ্ঠায় ফুটনোট ও রেফান্সের ঘাটতির বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সেটি তার অনভিজ্ঞতা প্রসূত ভুল বলে স্বীকার করেছে। তর্কিত নিবন্ধের কোথাও ফুকো বা সাঈদের কথাকে মারজান তার বক্তব্য বলে দাবি করেনি বরং মারজান যেটি করেনি, সেটি ছিল তার নিজস্ব পর্যালোচনার বিশ্লেষণ। কিন্তু সেটি বাতিল করার দায়িত্ব ছিল রিভিউয়ারের এবং এডিটোরিয়াল বোর্ডের।
 
তদন্ত কমিটির কার্যক্রম গোপন হওয়া সত্ত্বেও প্রতি মিটিং এর খবর বিশ্ববিদ্যালয় জানার আগে গণমাধ্যমে যেচে প্রচার করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। আমার সাক্ষ্য গ্রহণকালে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করেছেন এবং ধমকা ধমকি করেছেন তদন্ত কমিটির কতিপয় সদস্য। তদন্ত কমিটির দীর্ঘসূূত্রিতা ও তাদের ব্যবহারে আমি বাধ্য হয়ে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় তদন্ত কমিটির সদস্য পরিবর্তনের জন্য ১৮/১২/২০১৯ বর্তমান ভিসি বরাবর চিঠি দেই ( যার আইনগত অধিকার আমার আছে) কিন্তু ভিসি মহোদয় সেই চিঠিকে আমলই দেননি। পূর্বোক্ত কমিটিই বহাল রেখেছিলেন। আমার আশংকা সত্য প্রমানীত করে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে পাশ কাটিয়ে তদন্ত কমিটি ও সিন্ডিকেট সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট ও বিদ্বেষপ্রসূত (Mala fide) প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তারা ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত মানেননি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবি মেজবাহ আহমেদের সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ মানেননি। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদীতি এবং পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট প্রদান করেছেন যেটি তাদের নিজস্ব পর্যালোচনা ও সুপারিশের মাধ্যমেই প্রতীয়মান হয় -
 
ক) তদন্ত কমিটি তাদের পর্যালোচনায় রিভিউয়ারের রিপোর্ট আমি পেয়েছি কি না সে বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ নেই বলে উল্লেখ করেছেন।
খ) এডিটোরিয়াল বোর্ড দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেছেন।
গ) লেখাটি জমা দেয়া থেকে ছাপানো পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে যথেষ্ট দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেছেন।
ঘ) আমি ২০১৭ ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাহারের ( তদন্ত শুরুর সাত মাস আগে) আবেদন করেছিলাম এবং ঐ দরখাস্তটি আমার লিখিত বক্তব্যের সাথে সংযুক্ত করা সত্ত্বেও তদন্ত কমিটি ও সিন্ডিকেট এটিকে আমলে নেয়নি।
ঙ) মারজান তদন্ত কমিটির কাছে লেখাটি জমা দেবার কথা স্বীকার করলেও তদন্ত কমিটি কে জমা দিয়েছে তা স্পষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেছেন।
 
যে সব তথ্য উপাত্ত দিয়েছি তদন্ত কমিটি ও ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে, আপনাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্টে অ্যাপিল করে যাচাই করে নিতে পারেন। আমরাও তদন্ত কমিটির রায় ও সিন্ডিকেটের রেজুল্যশনের জন্য অ্যাপিল করেছিলাম আরো ৩ মাস আগে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজ পর্যন্ত কোনো তথ্য পাইনি, সহযোগিতা পাইনি। দরকার হলে সিন্ডিকেটের আহবায়ক ড. রহমতউল্লাহ, সদস্য ড. জিনাত হুদার সাথে কথা বলেও আমার দেয়া তথ্য যাচাই করে নিতে পারেন। এ প্রসঙ্গে একটি কথা মনে পড়ে গেলো, যদিও ট্রাইব্যুনাল গোপনীয় বিষয়, প্রকাশ্য নয়। কিন্তু সামিয়ার প্রতিনিধি আইনজীবি জানিয়েছিলেন, ট্রাইব্যুনালের আহবায়ক ড. রহমতউল্লাহ বিরক্ত হয়েছিলেন তদন্ত কমিটির একজন সদস্যর নাম পরিচয় দেখে। ড. রহমতউল্লাহ উল্লেখ করেছিলেন, যিনি নিজেই প্লেজারিজমের সাথে যুক্ত, তিনি কী করে তদন্ত কমিটির সদস্য হন!